সেমিনারের জন্য নির্বাচিত ৫টি বিষয়
হাঁটার উপকারিতা
শরীর ভালো রাখার জন্য মানুষের আয়োজনের কমতি থাকে না। আবার, এক্টু অসচেতন থাকলে শরীরের সুখ অসুখে পরিনত হয় । তাই ছোট একটা টনিক দেই। সেটা হলো “হাঁটা।
তবে হাঁটা শুরু করার আগে বেশ কিছু প্রশ্ন মাথায় আসে।
কখন হাঁটবেন?
কত সময় হাঁটবেন?
হাঁটার গতি কেমন হবে?
খালি পেটে হাঁটবো নাকি ভরা পেটে?
হাঁটা নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন ডায়াবেটিকস সমিতির মনোবিজ্ঞানী ডাঃ শুভাগত চৌধুরি। তার উত্তর হলো আপনি যেকোনো সময়ই হাঁটতে পারবেন। তবে হাঁটার জন্য ভালো সময় হলো বিকালবেলা। অনেকে সকালেও হাঁটেন । সকালে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটা ভালো। বয়স্কদের হাঁটার বিষয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়া উচিত। তবে ঘুম থেকে উঠেই হাঁটতে যাওয়া ঠিক না। উঠার ৩০ মিনিট পর হাঁটতে বের হওয়া উচিত। মন-মেজাজ ঝরঝরে এবং ভালো রাখতে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই।
-
নিয়মিত হাঁটলে হার্ট ভালো থাকে এবং ব্লক তৈরি হয় না।
-
হাঁটলে দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকে এবং ঝুঁকি কম হয়।
-
প্রতিদিন হাঁটলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ঝুঁকি কম হয়।
-
নিয়মিত হাঁটলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে এবং মেদ-ভুঁড়ি জমতে পারে না।
-
অনেকেই বুকে চর্বি জমার ফলে হৃদ রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে হাঁটলে এর ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।
-
এতে দৈনন্দিন বাড়তি কাজের চাপে হার্টের উপর বাড়তি প্রভাব পড়ে না।
-
নিয়মিত হাঁটলে মানসিক চাপ ও টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
-
প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে হাঁটলে গড় আয়ু বৃদ্ধি পায়।
-
নিয়িমিত হাঁটলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
-
হাঁটলে ভালো ঘুম হয়, হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, ক্ষুধা বাড়ে।
-
নিয়মিত হাঁটলে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় ও কাজের প্রতি অনীহা থাকে না।
-
নিয়মিত হাঁটলে কিডনি, যকৃত, ফুসফুস সহ অন্যান্য অঙ্গের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
-
সাধারণত ৩০ বছর বয়সের পর শরীরের চামড়া ঢিলা হতে থাকে যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় নিয়মিত হাঁটা দ্বারা।
-
হাঁটার ফলে চেহারা ও দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
-
নিয়মিত হাঁটলে স্মৃতি শক্তি বাড়ে এবং হাড় ও পেশি মজবুত হয়।
-
ব্যথা, ম্যাচ ম্যাচ ভাব ইত্যাদি থাকে না। শরীর ফুরফুরে থাকে।নিয়মিত হাঁটলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ঝিম ঝিম ভাব, বাতের
-
গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মেয়েরা নিয়মিত হাঁটে তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার ঝুঁকি কম থাকে।
-
দেহে সংশ্লেষ বৃদ্ধি পায়। ডিরোদে হাটার ফলে ভিটামিন
-
নিয়মিত হাঁটলে আপনার দেহের চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ে।
-
হাঁটার সময় দেহ সোজা করে হাঁটবেন। কুঁজো বা বাঁকা হয়ে হাঁটবেন না।
আমরা এখন বলতে পারি যে, এই ২০ টি উপকারিতা সম্পর্কে পড়বার সময় আপনি মোটামটি ১ টি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন যে আপনি এখন থেকে হাঁটবেন এবং আপনাকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য আগাম অভিনন্দন। আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবন হাঁটার জন্য কিছুটা সময় রেখে নিজেই থাকতে পারেন অনেক সুস্থ ও সবল। তবে আপনি হাঁটা শুরু করার আগে নিচের টিপসগুলো একটু অনুসরণ করুন;
-
প্রথম দিনেই প্রচুর পথ হাঁটবেন না। প্রথম দিন অল্প থেকে শুরু করুন। তারপর প্রতি ২-৩ দিন পর সামান্য একটু পথ বাড়িয়ে নিন। এভাবেই এক্টু একটু করে বাড়িয়ে নিন।
-
হাঁটার সময় গতি আস্তে আস্তে বাড়ান, দৌড়াবেন না। হাঁটা যেন জগিং না হয়।
-
হাঁটা শুরু করার আগে অন্তত দুই গ্লাস পানি বা মেথি ভিজানো পানি খেয়ে বের হন।
-
অফিস বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার সময় বাস থেকে আগের স্টপেজে নেমে পরুন। এতে করে স্বাভাবিকের তুলনায় এক্টু বেশিই হাঁটা হবে।
-
হাঁটার সময় কেটস বা পাতলা জুতা পড়ে হাঁটতে হয়, তা না হলে পায়ে ব্যথ্যা পাবেন।
গরম পানির উপকারিতা
একদল জাপানি চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন যে কয়েকটি স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে গরম পানি ১০০% কার্যকর।
মাইগ্রেন, উচ্চ রক্তচাপ, নিম্ন রক্তচাপ, জয়েন্ট এর ব্যাথা, হঠাৎ হৃদ স্পন্দন বৃদ্ধি এবং হ্রাস, মৃগী, কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি, কাশি, শারীরিক অস্বস্তি, গাটের ব্যাথা, হাঁপানি, ফোঁস কাশি, শিরায় ব্যাথা, জরায়ু ও মূত্র সম্পর্কিত রোগ, ক্ষুধার সমস্যা এছাড়াও চোখ, কান এবং গলা সম্পর্কিত সমস্ত রোগ।
কীভাবে গরম পানি পান করবেন?
নিয়মিত রাত ১০-১১ টার মধ্য ঘুমিয়ে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে প্রায় ২ গ্লাস গরম পানি পান করতে হবে, প্রথম দিকে ২ গ্লাস পানি পান করতে সক্ষম নাও হতে পারে কেউ। তবে আস্তে আস্তে এটি করতে পারবেন।
বিঃদ্রঃ গরম পানি পান করার পরে ৪৫ মিনিট কোনো কিছুই খাওয়া যাবে না।
গরম পানি থেরাপি যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্য যে সমস্ত স্বাস্থ্য সমসসাগুলোর সমাধান করবে, নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
-
৩০ দিনের মধ্য ডায়াবেটিস
-
৩০ দিনের মধ্য রক্তচাপ
-
১০ দিনের মধ্য পেটের সমস্যা
-
৯ মাসের মধ্য সমস্ত ধরণের ক্যান্সার
-
৬ মাসের মধ্য শিরার বাধার সমস্যা
-
১০ দিনের মধ্য ক্ষুধা জাতীয় সমস্যা
-
১০ দিনের মধ্য জরায়ু এবং এর সম্পর্কিত রোগগুলো
-
১০ দিনের মধ্য নাক, কান এবং গলার সমস্যা
-
৩০ দিনের মধ্য হৃদরোগ জাতীয় সমস্যা
-
৩ দিনের মধ্য মাথা ব্যাথা / মাইগ্রেন এর সমস্যা
-
৪ মাসের মধ্য কোলেস্টেরল এর সমস্যা
-
০৯ মাসের মধ্য মৃগী এবং পক্ষাঘাত সমস্যা
-
ঠাণ্ডা পানি পান করা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। যদি অল্প বয়সে ঠাণ্ডা পানি প্রভাবিত না করে, তবে এটি বৃদ্ধ বয়সে ক্ষতি করবেই।
-
ঠাণ্ডা পানি হার্টের ৪ টি শিরা বন্ধ করে দেয় এবং হার্ট অ্যাটাকের মুল কারণ হলো কোল্ড ড্রিংকস। এটি লিভার এর সমস্যা তৈরি করে। লিভারের সাথে ফ্যাট আটকে রাখে। লিভার ট্রান্সপ্লান্টের অপেক্ষায় থাকা বেশিরভাগ মানুষ ঠাণ্ডা পানি পানের কারণে এর শিকার ।
তিল ও তিসির উপকারিতা
খাদ্য হিসেবে তিল খুবই জনপ্রিয়। নাড়ু, মোয়া ইত্যাদি মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় তিল। এছাড়া তিলের তেল আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারি। তিলের তেল ব্যবহার করা হয় রূপচর্চার ক্ষেত্রেও। পুষ্টির সমস্যা নিরসনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তাই সুস্থ থাকার জন্য তিল ও তিসির প্রয়োজনীয়তা জেনে রাখা উচিত।
তিলের উপকারিতাঃ
১। প্রতিদিন ভোরে এক চামচ কালো তিল অল্প অল্প করে মুখে দিয়ে মিহি করে চিবিয়ে যখন রসের মতো হয়ে যাবে তখন গিলে খেতে হবে। এই তিল খাওয়ার তিন ঘণ্টা পর্যন্ত কিছু খাওয়া যাবে না।এভাবে তিল খাওয়ার সঙ্গে তেলের মালিশ ও করা যায়, তাহলে রোগা থেকে স্বাস্থ্যবান হবেন। আর যারা মোটা তাদের মেদ কমে যাবে।
২। যাদের শরীরের বৃদ্ধি কমে যায়, তাদের শারীরিক বৃদ্ধির জন্য তিল খুবই উপকারি।
৩। যদি কারও মাড়ি থেকে দাঁত দুর্বল হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে তিলের মাধ্যমে দুর্বল দাঁত মজবুত করা যায়।
৪।সর্দি, কাশি, বুকে কফ জমে যায় – এ জাতীয় অসুখে কালো তিলের তেল খুবই গুরুত্তপূর্ণ। এটি সর্দি, কাশির জন্য দ্রুত কাজ করে এবং ফলাফল ও খুব ভালো হয়।
৫। অনেকেরই অকালে চুল পেকে যায় এবং দুর্বল হয়ে চুল পড়ে যায়। তাদের এই সমস্যা নিরসনে কালো তিলের প্রয়োজন। এই তিলের তেল প্রয়োগ করলে খুব উপকার পাওয়া যায়। এমনকি চুল গজাতেও সাহায্য করে।
৬। শরীরের ক্লান্তি দূর করে এবং সব ইন্দ্রিয়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
৭। তিলের তেল শরীরের রং উজ্জ্বল করে দেয় এবং শরীরের ছোট ছোট দোষত্রুটি দূর করে দেয়।
৮। এটি মাথার যন্ত্রনা কমিয়ে দেয় এবং বুদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৯। তিল, যব, চিনি চূর্ণ করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে যাদের বাচ্চা হবে অর্থাৎ সগর্ভা এবং যাদের বাচ্চা হয়েছে অর্থাৎ প্রসূতা বা প্রসূতির রক্তস্রাব বন্ধ হয়।
১০। যে সব শিশু রাতে বিছানায় প্রস্রাব করে তাদের কালো তিল আর তার সঙ্গে এক টুকরো মুলো খাওয়ালে এই বদ- অভ্যাস দূর হয়।
১১। শরীরের পুড়ে যাওয়া জায়গায় তিল পিষে নিয়ে, জলে ধোওয়া ঘি ও কর্পূর মিশিয়ে প্রলেপ দিলে সুফল পাওয়া যায়। তিলের তেল গরম করে লাগালেও আশ্চর্য সুফল পাওয়া যায়।
১২। যদি শরীরের কোনো অংশ খুব জ্বালা করতে থাকে তাহলে তিল দুধ দিয়ে পিষে প্রলেপ লাগালে দাহ বা জ্বালা দূর হয়।
১৩। যদি টাটকা ক্ষত বা ঘা না সারে তাহলে তিল পিষে নিয়ে মধু আর ঘি মিশিয়ে লাগালে অনেক ওষুধ বা মলমের চেয়ে বেশি কাজ দেয়।
১৪। পেষা কালো তিল এক ভাগ, চিনি দুই ভাগ এবং ছাগলের দুধ চার ভাগ একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে রক্ত- আমাশা সারে।
১৫। অল্প তিল আর চিনি একসঙ্গে পিষে বা কুটে নিয়ে মধু মিশিয়ে চাটালে বাচ্চাদের মল থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
১৬। যদি মেয়েদের ঋতুস্রাব ঠিক মতো না হয় এবং খুব ব্যাথা হয় তাহলে তিলের তেল খাওয়া উচিত। দু চা চামচ তিল পিষে নিয়ে এক গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে নিন। এক চতুর্থাংশ পানি থেকে গেলে সেই পানিটুকু পান করলে মাসিক ঠিক মতো হবে।
তিসির গুণ জেনে নিন-
১। ওজন কমায়- তিসির স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও আঁশ অনেকক্ষণ পেট ভরে রাখে। ফলে, কম খাবার খেলেও চলে। ওজন কমাতে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় স্যুপ, সালাদ ও যে কোনো পানীয়ের সঙ্গে কয়েক চা চামচ তিসি বীজ খাওয়া যেতে পারে।
২। খারাপ কোলেস্টেরল কমায়- গবেষকদের দাবি, শরীরে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমায় তিসিবীজ।
৩। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ- তিসিবীজ রক্তে চিনির মাত্রা কমায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। দৈনিক
১৫-২০ গ্রাম তিসি খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে।
৪। হজমে সাহায্য- শরীরের দুষিত পদার্থ বের করে দেয় তিসি। অতিরিক্ত মেদ কমায়। কোষ্ঠ কাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে ১-৩ টেবিল চামচ তিসির তেল ১ কাপ গাজরের রসের সঙ্গে নিয়মিত খেলে উপকার পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের উপকার পাওয়া যায়।
৫। ক্যান্সার প্রতিরোধী – তিসিতে রয়েছে প্রচুর ফাইটো অ্যাস্ট্রোজেনিক লিপ্লান্স। এটি শরীরে ক্যান্সারের কোষ গঠনে বাঁধা দেয়। স্তন, প্রস্টেট ওভারিয়ান ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৬। হার্ট সুস্থ- তিসিবীজে রয়েছে আলফা লিনোলিক অ্যাসিড। এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।
৭। তামাকের নেশা থেকে মুক্তি- প্রতিদিন লাঞ্চের পর অল্প একটু তিসি চিবালে তামাক বা অন্য নেশা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে বলে গবেষকদের দাবি।
৮। সন্দর ত্বক, চুল, নখ- প্রতিদিন ১ চামচ তিসি গুঁড়ো চুল পরা কমায়, স্কিন ও নখকে স্বাস্থ্যবান করে।
৯। তিসির বীজে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩। আপনি যদি মাছ খেতে অপছন্দ করেন তাহলে তিসির বীজ হতে পারে আপনার জন্য ওমেগা-৩ আহরণের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উৎস। এতে আছে প্রচুর আলফা লিনোলিক এসিড alpha-linolenic acid [ALA] নামে এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড।
৯। ALA আপনার শরীরের জন্য খুবই দরকারি একটি ওমেগা-৩ এবং এটি আপনার খাদ্য থেকে নিতে হবে কারন আপনার দেহ প্রাকৃতিক ভাবে ALA উৎপাদন করে না।
১০। পশুর উপর করা গবেষণায় দেখা গেছে তিসির বীজের ALA রক্তের ধমনীতে কোলেস্টেরল জমা হওয়া বন্ধ করে, ধমনীর প্রদাহ কমায় এবং টিউমার হওয়া বন্ধ করে।
জয়ফলের উপকারিতা
জয়ফলকে অনেকে চিনেন বিরিয়ানির মসল্লা হিসেবে। জয়ফলকে ব্রেন টনিক হিসেবে ব্যবহার করে গ্রীক এবং রোমানরা। এই ফল মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে, মানসিক অবসাদ মুক্তি হয়। বিষন্নতা ও উদ্বেগ থেকে মুক্তির সহজ সমাধান জয়ফল। ১০০ গ্রাম জয়ফলে রয়েছে পরিমিত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন সি ইত্যাদি।।এবার আসি এ জাদুকর ফলের মানবদেহের কোন কোন রোগ দূর করে -
-
ডায়াবেটিস দূরীকরণে মোটামুটি সহায়ক, এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টঅক্সিডেন্ট যা সুগার কমতে সাহায্য করে। এতে করে ক্যান্সারের ঝুঁকিও থাকে না।
-
অনেকের বৃদ্ধ বয়সে স্মরণশক্তি কমে যায়। আবার শিশুকাল থেকে ব্রেইন পাওয়ার কম থাকে, পড়ালেখা মনে থাকে না, বুদ্ধি কম ।তাদের জন্য জয়ফল বিশেষ উপকার করে। জয়ফলের বিশেষ গুণাগুণ শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই সেরেটোনিন ও ডোপামিন হরমোন এর ক্ষরণ বেড়ে যায়। এটি মস্তিষ্কের সৃতিশক্তি ইউনিট এর কাজ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় যা সৃতিশক্তি ম্যাজিকের মতো বাড়িয়ে দেয়। শুধু কি তাই? বৃদ্ধ বয়সে এলসাইমান ও পালপ্রটিকস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
-
হাঁটু, কোমর, পিঠ ও বাতের ব্যথায় যারা দীর্ঘদিন ভুগছেন, চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করেন দিনে ১ বার জয়ফল খাবেন অলিভ অয়েল/সরিষার তেলের সাথে মিশিয়ে মালিশ করতে পারেন। এতে রয়েছে খনিজ পদার্থ, ব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট যা হাড় ও জয়েন্টের ব্যাথা দূর করে।
-
চীনারা জয়ফলকে ঔষধ হিসেবে ব্যাবহার করছে। তারা ইমফ্লেমেশন ও এবডোমিনাল পাইনের চিকিৎসায় এটি ব্যাবহার করতো।জয়েন্ট পাইন, মাসল পেইন, আর্থ্রাইটিস এ জয়দলের তেল ব্যাবহার করলে ব্যাথা থেকে রেহাই পাওয়া যায় সহজেই।
-
হজমজনিত সমস্যা যেমন- ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি, পেট ফাঁপা ইত্যাদি রোগে ভুগে থাকেন, তবে জয়ফলই হলো আপনার কার্যকরী সমাধান। জয়ফল খাবারের রুচি বাড়ায়।
-
জয়ফলের তেল পেট ব্যাথা কমায়, পেটের গ্যাস বের করে দেয় খাবারের পরে।
-
দাঁতে ব্যাথা ও মাড়ির সমস্যা দূর করে, পাইরিয়া ভালো হয়।
-
জয়ফলে থাকা এন্টিমাইক্রোবিয়াল মুখের দুর্গন্ধ দূর করে ও মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
-
ব্রণ সরাতে জয়ফলের সাথে মধু মিশিয়ে ৩০ মিনিট মুখে মেখে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্রণ সরাতে সাহায্য করে।
ঘরোয়া ফেসপ্যাক বানাতে জয়ফল গুঁড়ার সাথে কফি বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যাবহার করুন, মরা চামড়া দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করবে জয়ফলের সাথে লেবু ও মধু মিশিয়ে ১০ মিনিট মুখে রেখে ধুয়ে ফেলুন, এতে ব্রণ দূর হয়।
চোখের চুলকানিতে জয়ফলের গুঁড়া সুরমার মতো লাগলে চুলকানি কিছু হলেও প্রশম হয়।
জয়ফল ভাতের মাড়ের সাথে খেলে হেচকি ও বমি বমি ভাব দূর হয়।
জয়ফলের গুঁড়া রাতে ঘুমের আগে ১ কাপ চায়ের সাথে মিশিয়ে খেলে ঘুম ভালো হয়।
সতর্কতা
-
জ্বর থাকলে খাওয়া যাবে না।
-
গর্ভবতী অবস্থায় খাবেন না।
-
ব্লাড প্রেসার বেশি থাকলে এড়িয়ে চল...
পরিমাণ
-
হাটু ব্যাথা, কোমড় ব্যাথা, পিঠ ব্যাথার জন্য জয়ফল গুঁড়া এক চা চামচের ১/৪ ভাগ ও তার সাথে সরিষার তেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে খাবেন।
-
যখনই খাবেন ৭ দিন খাবেন ১ বেলা করে মধুর সাথে এক চা চামচ এর ১/৪ ভাগ।
মনোপজ
বয়স ৪৫ থেকে ৫০, কি ৫৫! এই বয়সের নারীদের শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে! খিটখিটে মেজাজ, অবসাদ, ক্লান্তি যেন এই বয়সী নারীদের নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। আর এর মূল কারণ এই বয়সেই সাধারণ জীবনের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করে “মেনোপজ” বা রজনিঃবৃত্তি।
এই সময় শারীরিক নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন নারীরা। রাতে ঠিকমতো ঘুম না হওয়া, কাজে আগের মতো স্বতস্ফূর্ত না থাকা আর অবসাদ তো আছেই। শরীরের এমন পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে হিমশিম খান বেশিরভাগ নারী। মনে করেন “এইতো বুড়ি হয়ে গেলাম, জীবন এখানেই শেষ। “
“মেনোপজ” মানে কি আসলেও জীবনের অন্তিম মোড় এক সময় এই অবস্থাকে অনেকটা সে দৃষ্টিতেই দেখা হতো। তবে আধুনিক নারীদের তো আর মেনোপজ এর কারণে প্রতিদিন এর কাজ ফেলে বিলাপ করার সময় নেই। তাই এ সময়ের শারীরিক পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হয় তাদের।
নিজেকে ব্যস্ত রাখা আর বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটানো এই সময় মানসিক শান্তি দিতে পারে। আর তাদের জন্যই এই সময়ে কি ধরনের পরিবর্তন এবং সমস্যা হতে পারে আর এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিষয়গুলো জানা থাকা জরুরি।
একটা সময় নারীদের যখন মেন্সট্রউয়েশন বন্ধ হয়ে যায় তাকে মেনোপজ বলে। এই সময়ে ওভারিতে ডিম্বাণুর সংখ্যা একদম কমে যায়।”
জন্মের সময় মেয়েদের ওভারিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিম্বাণু থাকে আর পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর প্রতি মাসে ডিম্বাণু নিঃসৃত হয়। বয়স ৫০ পার হলে ওভারিতে ডিম্বাণু শেষ হয়ে যায় যার ফলে মেনস্ট্রুয়েশন বন্ধ হয়ে যায়। আর এটাই হলো মেনোপজ।
পিরিয়ড শেষ হওয়ার কয়েক বছর আগে থেকেই মেনোপজের লক্ষণ দেখা যায়। ৫০ বছর বয়সের পর মেনোপজ হলে একে বলা হয় “নরমাল মেনোপজ। যদি ৪০ পেরোবার আগেই কোনো নারীর মাসিক বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তাকে বলে “প্রিম্যাচিওর মেনোপজ।
আবার যদি কোনো কারণে অপারেশন করে ওভারি বাদ দেওয়া হয় তাহলেও মেনোপজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একে বলা হয় “সার্জিকাল মেনোপজ।
মেনোপজের লক্ষণ
ডা. সুপর্ণা বলেন, “সবার ক্ষেত্রে এর লক্ষণ এক রকম হয় না। তবে মেনোপজের কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীরা বুঝতে পারেন যে তাদের মাসিকের পরিমাণ কমে এসেছে।”
ব্লিডিংয়ের পরিমাণ কমে আসার পাশাপাশি মাসিকের স্থায়িত্বও কমে যায়। সাধারণত টানা ১২ মাস যদি পিরিয়ড না হয়, তাহলে বুঝতে হবে মেনোপজ হয়ে গেছে।
“এ ছিল মেনোপজ হওয়ার সময়ে মেনস্ট্রুয়াল পরিবর্তন। এছাড়া এই সময় আরও বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম 'হট ফ্লাশ'।”
হঠাৎ করে মনে হবে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে গরম হল্কা বের হচ্ছে। “নাইট সোয়েট”- মাঝে মাঝে রাতে ঘুম ভেঙে যেতে পারে আর সারা শরীরে ঘাম হতে পারে, মুড সুইং হয় ও অবসাদ দেখা দেয়।
“তাছাড়া এ সময় খুব জলদি হাপিয়ে ওঠেন নারীরা।
ডিপ্রেশন, চিড়চিড়ে মেজাজ, ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস ও ঘন ঘন বাথরুম হওয়া এ সবই মেনোপজের উপসর্গ।”
বলেন, ডা. সুপর্ণা।
ডা. সুপর্ণা বলেন, “সবার ক্ষেত্রে এর লক্ষণ এক রকম হয় না। তবে মেনোপজের কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীরা বুঝতে পারেন যে তাদের মাসিকের পরিমাণ কমে এসেছে।”
ব্লিডিংয়ের পরিমাণ কমে আসার পাশাপাশি মাসিকের স্থায়িত্বও কমে যায়। সাধারণত টানা ১২ মাস যদি পিরিয়ড না হয়, তাহলে বুঝতে হবে মেনোপজ হয়ে গেছে।
“এ ছিল মেনোপজ হওয়ার সময়ে মেনস্ট্রুয়াল পরিবর্তন। এছাড়া এই সময় আরও বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম 'হট ফ্লাশ'।”
হঠাৎ করে মনে হবে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে গরম হল্কা বের হচ্ছে। “নাইট সোয়েট”- মাঝে মাঝে রাতে ঘুম ভেঙে যেতে পারে আর সারা শরীরে ঘাম হতে পারে, মুড সুইং হয় ও অবসাদ দেখা দেয়।
“তাছাড়া এ সময় খুব জলদি হাপিয়ে ওঠেন নারীরা।
ডিপ্রেশন, চিড়চিড়ে মেজাজ, ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস ও ঘন ঘন বাথরুম হওয়া এ সবই মেনোপজের উপসর্গ।”
বলেন, ডা. সুপর্ণা।
প্রভাব
মেনোপজ সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে নারীর হাড়ের উপর। একে বলে অস্টিওপোরসিস। কারণ মেনোপজের কারণে হাড়ের ক্যালসিয়াম কমতে শুরু করে। তাই হার দুর্বল হয়ে যায়। আর খুব সামান্য আঘাত বা হোঁচটেও বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে কোমড়ের এবং কোমড়ের নিচের দিকের হাড় খুবই দূর্বল হয়ে যায়। তাই বেশিরভাগ নারী কোমরের ব্যাথায় ভুগে থাকেন। জানালেন ডা. সুপর্ণা।
মেনোপজের উপসর্গগুলো দেখা দেওয়ার পরই বেশিরভাগ নারীই ভাবতে শুরু করেন যে, তিনি বুড়ো হয়ে গেছেন। এটা একেবারেই ঠিক নয়। এরপরও জীবনের অনেকটা সময় বাকি থাকে। মেনোপজ কোনো অসুখ নয়, এটি নারীর জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। তাই এর কোনো চিকিৎসা ও হয় না। সুন্দর সহচর্য এই সময়ের মানসিক সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।
মেনোপজের শারীরিক উপসর্গগুলো বেশ অস্বস্থিকর, তবে মনের ওপর এর প্রভাব আরও বেশি। অনেক নারীই শারীরিক পরিবর্তনগুলো চট করে মেনে নিতে পারেন না। আর এ কারণে নানান ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
যে নারীরা স্বামী, সংসার ও সন্তানদের নিয়েই বেশি সময় কাটিয়ে জীবনের বেশিরভাগ সময় পার করছেন তাদের সঙ্গে এ সময় স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গে দুরত্ব তৈরি হয়। কারণ মধ্যবয়স্ক একজন নারীর স্বামীরাও তাদের কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অন্যদিকে সন্তানরাও বড় হয়ে নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যাস্ত। আর তাই তিনি একা হয়ে যান। আর ওই সময়েই মেনোপজের কারণে মানসিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।
বরাবরই তাদের মধ্যে ভর করে একাকিত্বতা। ডা. সুপর্ণা জানান, মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় “এম্পটিনেস সিনড্রোম"। আর এ পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে নারীর নিজের একটি আলাদা স্থান তৈরি করে নেওয়া উচিত।
দীর্ঘ মেয়াদী যেসব সমস্যা হতে পারে-
১. হার্টের রোগ হওয়া
২. হাড় ক্ষয় হওয়া
৩. ওজন বাড়া
৪.প্রশ্রাবের কিছু সমস্যা হওয়া
৫. মেটাবলিক সিনড্রোম
৬. ক্যান্সার হওয়া
৭. মানসিক সমস্যা হওয়া
ভালো থাকার চেষ্টা
সময়ের অভাবে এক সময় যে শখগুলো পূরণ করা হয়নি সেগুলো নতুন করে শুরু করা যেতে পারে। নতুন কোনো ভাষা শেখা, জামাতের বই পড়া, জামাতের কাজ করা, হালকা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা, নাসেরাতদের তালিম দেওয়া, রান্না শেখা, সেলাই শেখা - ইত্যাদি যেকোনো উপায়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করাই আসল উদ্দেশ্য। নিজের জীবনকে সুন্দর করে গুছিয়ে নিতে পারলে মেনোপজের সময়ও এর প্রভাব থেকে নিজেকে আলাদা রাখা যাবে। মেনোপজের বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক লক্ষণ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে চিকিৎসা করানো উচিত।
ডা. সুপর্ণা বলেন “হয় ফ্লাশ বা নাইট সোয়েট, ডিপ্রেশন, ঘুমের সমস্যা যদি বেশিদিন চলে তাহলে এর থেকে রেহাই পেতে হরমোন ট্রিটমেন্ট করানো যেতে পারে। ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন কম ক্ষরণ বা ক্ষরন না হওয়ার কারণেই মেনোপজ হয়। এই হরমোনগুলো প্রতিস্থাপন করা হলেই সমস্যার অনেকটা সমাধান করা যায়। তবে এটি যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ এবং খরচ সাপেক্ষ একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া"।
“আমাদের দেশের অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত সমাজে বেশির ভাগ নারীই নেনোপজের বিষয় এ জানেন না। তাই তাদের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা কাজ করে।” বললেন ডা. সুপরণা।
এই গাইনি চিকিৎসক আরো বলেন, “এটি নারীর জীবনের সাধারণ একটি ঘটনা এবং প্রত্যেক নারীর জীবনেই এই মোড় আসে। এই বিষয়টি তারা বুঝেন না এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জানেন ও না। এ কারনে তারা নানা রকম ঔষধ খেয়ে থাকেন এবং ইনজেকশন নেন। আর এগুলো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় তাদের আর বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।“
মেনোপজের সময় ‘ এম্পটি নেস্ট সিন্ড্রোম’- এর কারনে অনেক নারীই ভাবতে শুরু করেন স্বামী এবং সন্তানের কাছে তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত একজন। সেখান থেকে তৈরি হয় বিরক্তি ও ডিপ্রেশন। অল্পেই রেগে যাওয়া- খিটখিটে মেজাজ – নিজেকে সামলাতে না পারলে এগুলোর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। আবার কোন কোন নারীর মধ্যে অতিরিক্ত সন্দেহ প্রবণতা দেখা যায়। নিজেকে অসহায় ভাবতে শুরু করা, এসময় সবচাইতে গুরুতর লক্ষন। তবে এইসব কারনে দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। দেখা যায় মানুষিক ভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারনে প্রতিদিনকার কাজও ঠিক মত করতে পারছেন না মধ্য বয়স্ক একজন নারী। আর তার কাছ থেকে আগের মতো স্বতঃ স্ফূর্তটা না পেয়ে স্বামী এবং পরিবারের অন্যরাও এতে বিরক্ত হন। তবে পরিবারের সদস্য দেরও একজন নারীর ঐ সময়ের মানুষিক অবস্থা বুঝতে হবে। তাদের বুঝতে হবে এই পরিস্থিতি খুবই সাময়িক। দু’ তিন বছরের মধ্যেই আবারও এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
ডাঃ সুপর্ণা বলেন, “ এ ধরনের মানসিক পরিস্থিতি তে স্বামী এবং পরিবারের সহযোগিতা খুবই জরুরী। স্বামী যদি স্ত্রীর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে কিছুটা বুঝে তাকে সাহায্য করে তাহলে মানসিক অস্থিরতা কিছুটা কম হয়। সারাদিন পর এক সঙ্গে গল্প করা বা পছন্দের জায়গায় ঘুরতে যাওয়া এ ধরনের মানসিক পরিস্থিতি তে খুব ই কার্যকর ।“ মেনোপজের কারনে শরীর এর ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি দেখা দেয়। তাই এই সময় খাবারে ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে। আর মাঝ বয়সে সব ধরনের খাবারও খাওয়া যায়না। তাই নিয়ম করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। “এ সময় ভাল ’প্রোটিন’ এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা উচিত। তাছারা ভিটামিন বি কমপ্লেস্ক খেতে হবে। কিডনি বিন, হোলগ্রেইন আটার রুটি, মুরগির মাংস, কলিজা, লাল চালের ভাত, ব্রকলি, সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদি খাবার থাকতে হবে খাবার তালিকায়। তাছাড়া ক্যালসিয়াম ও হার্ট ভাল রাখতে গরুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস করেতে হবে।“ বললেন ডাঃ সুপরনা। কিছুটা সচেতন থাকলে মনোপজ সম্পর্কে ভাল ধারনা থাকলে, এবং পরিবারের সহায়তা পেলে, এধরনের মানুষিক অবস্থা থেকে নিজেকে কিছুটা হলেও জেকন নারী সুস্থ রাখতে পারবেন। প্রস্রাব এর জ্বালা পোড়ার সমস্যা কম বেশি অনেকেরি হয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা কম পানি পান করেন তাদের এ সমস্যা বেশি। প্রস্রাব এর সময় ব্যাথা, জ্বালাপোরা ও অস্বস্থি হয়। এটি কোন রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। এটি নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রেই এটি খুব প্রচলিত সমসা। তবে পুরুষের তুলনায় নারীর সমস্যা বেশি হয়।
প্রস্রাবে সংক্রমন কেন হয়?
জরায়ুমুখের প্রদাহ, যোনিপথে ছত্রাক সংক্রমণ বা ক্ল্যামাইডিয়ার মতো জীবাণু সংক্রমণের কারণে প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া হতে পারে। এছাড়া তলপেটে ব্যাথা , মাসিক ব্যাথা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া , সাবান বা কসমেটিকস বা প্যাডে অ্যালার্জি জনিত বিভিন্ন কারণে প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে পারে। বার বার সংক্রমণ হলে ডায়াবেটিস, কিডনি বা পাথর সমস্যা, মূত্রথলিতে কোনো সমস্যা আছে কিনা দেখে নিন। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মেয়াদে ও সঠিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে। আর যাদের ঘন ঘন সংক্রমণ হয় তারা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে পারেন। এসব বিষয়ে জানিয়েছেন অ্যাপোলো হাসপাতালের গাইনি কনসালটেন্ট ডা.সোনিয়া মুখার্জি। তিনি বলেন প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সঙ্গে বেশিরভাগ নারীই পরিচিত। বিশেষ করে মধ্য বয়সী ও বয়স্ক নারীদের
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বেশি হয়ে থাকে। প্রস্রাবে সংক্রমণ সন্দেহ হলে অবশ্যই পরীক্ষা করা ও ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। যাদের ঘন ঘন সংক্রমণ হয় তারা দীর্ঘময়াদি চিকিৎসা নিতে পারেন। ডা. সোনিয়া বলেন অধিক সময় নেপকিন ব্যাবহার, সঙ্গীর প্রস্রাবে সংক্রমণ, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াও বিভিন্ন কারণে নারীর প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধান হতে হবে। সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই প্রচুর পানি পান করতে হবে।
আসুন জেনে নেই প্রস্রাবের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-
-
প্রচুর পানি পান করুন।
-
প্রস্রাবের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি পান করা জরুরি।
-
আমিষ নয়; প্রচুর পরিমানে শাক সবজি খাওয়া উচিত।
-
মাসিক চলাকালিন আমিষ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ সময় আমিষের বদলে প্রচুর পরিমাণে শাক সবজি খেতে হবে।
-
প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মেয়াদে ও সঠিক মাত্রায় এন্টি বায়ওটিক গ্রহন করতে হবে। আর যদি ঘন ঘন সংক্রমণ হয় , তারা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে পারেন।
-
পানিপানের পরিমান বাড়ান
-
পানি পানের পরিমাণ বাড়ালে প্রস্রাবের সময় ব্যাথা বা জ্বালাপোড়ার সমস্যা কম হবে। পানি সরিয়ে থেকে দূষিত ব্যাকটেরিয়াগুলো বের করে দেবে। এটি প্রস্রাব ঠিকঠাক মতো হতে সাহায্য করবে। এছাড়া প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে তরল খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। যেমন ধরুন - স্যুপ, জুস এবং পাশাপাশি পানি জাতীয় ফল ও সবজি খেতে হবে।
-
গরম চাপও দিতে পারেন। এতে ব্লাডারের চাপ কমবে এবং ব্যাথা কমবে। এজন্য আপনি হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন অথবা কোনো কাপড় তাপে গরম করে পেতে ব্যবহার করতে পারেন। একে তলপেটে ৫ মিনিট রাখুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন এবার দিন। এভাবে কয়েকবার করুন।
-
দইয়ে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া। এটি শরীরে পিএইচ এর ভারসাম্য রক্ষা করে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমতে প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ দই খান।